1885 সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি, কর্মসূচি

সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস এর বহিঃপ্রকাশঃ ভারতবাসীকে ইংরেজদের শাসন উনবিংশ শতাব্দিতে বিক্ষুব্ধ করে তুলে। সে বিক্ষোভ ক্রমশ বিভিন্ন রাজনৈতিক সমিতির মাধ্যমে সুস্পষ্ট আকার ধারণ করতে থাকে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী ব্রিটিশ সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সংগঠন সৃষ্টি করে। ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র জাতীয়তা বাদী চেতনার সৃষ্টি হয়। সৌভাগ্যক্রমে এই সময় কয়েকজন বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা এই সকল সমিতি গঠনে এগিয়ে এসেছিলেন। তারা বুঝেছিলেন যে বিক্ষিপ্ত ও একক প্রতিবাদের স্থলে সমিতির মাধ্যমে যুক্তভাবে অগ্রসর হলে ভারতবাসীর মধ্যে জনমত জাগ্রত করা সম্ভব হবে। এইভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক সমিতি গঠননের সূচনা হয়। এর বহিঃপ্রকাশ সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস।

কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমিঃ

ভারতের জাতীয়তাবাদের মূল ফসল কংগ্রেস। ইংরেজজাতি ভারতবাসীর উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্য উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে সভা সমিতির আয়োজন করে। অনীল শীল এ শতাব্দীকে The age of Association বলেছেন।

বাংলায় ১৮৩৮ সালে রাধাকান্ড দেবের সভাপতিত্বে ‘জমিদার সমিতি‘ হয়। ১৮৪৩ সালে নব্যবঙ্গ এর নেতারা ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ এসোসিয়েশন‘ গঠন করে। ১৮৫১ সালে ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন‘ গঠিত হয়। তারা বোম্বাই মাদ্রাজ সংগঠন করতে চেষ্টা করে। ১৮৮৪ সালে মাদ্রাজ মহাজন সভা। ১৮৬৬ সালে লন্ডনে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া এসোসিয়েশন‘। তবে ১৮৭৬ সালে ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন গঠন করার পর বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। তাদের সদস্য ছিল পেশাজীবি শ্রেণির। শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ বন্দোপাধ্যায়, অমলেষ ত্রিপাঠী প্রমুখ এই দলে ভূমিকা রাখেন। তারা কলকাতা এবং তার বাইরে শাখা স্থাপন করেন।

সম্রাট আকবরের ধর্মমত দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন ও রীতিনীতি

লর্ড লিটন ১৮৭০ এর পর প্রাতিষ্ঠানিক জাতীয়তাবাদ রুপ লাভ করে। ১৮৭৬-৭৭ সালে জাতীয়তাবাদী ভাব ধারার বিকাশ হয়। লিটনের দমননীতির বিরুদ্ধে ভারতবাসীর বিক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। লর্ড রিপনের এলবার্ট বিল কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। এই বিল অনুসারে দেশীয়রা শেতাঙ্গদের বিচার করতে পারবে। পরে এটি রদ হয়। ফলে জাতীয় সম্মেলন আহবান করা হয়। এটি জাতীয় আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। জাতিগত বৈষম্য বেড়ে যায়। ভারতীয়রা দেখে তারা সংখ্যায় বেশি হলেও মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে তারা জিম্মি। ফলে তারা সর্ব ভারতীয় সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

সুরেন্দ্রনাথ কলকাতার এলবার্ট হলে ১৮৮৩ সালে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় সংগঠনগুলোকে একজোট করেন। সম্মেলনে ভারতে শাসন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেন।

(১) সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স বৃদ্ধি।
(২) অস্ত্র আইন প্রত্যাহার।
(৩) প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা

১৮৮৫ সালে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। এভাবে কংগ্রেসের আত্মপ্রকাশ ঘটে। হিউম এবং উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বের অধিবেশনে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।

কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় বিতর্কঃ

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভব সম্পর্কে নানাবিধ মতামত প্রচলিত আছে। কারো মতে ব্রিটিশ সিভিলিয়ান হিউম বড়লার্ট লর্ড ডাফরিনের এর সাহায্যে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত করে। অনেকে বলেন ডাফরিনের ছত্রছায়ায় উমেশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং ডাফরিন কে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। সুরেন্দ্রনাথ শুধুমাত্র সংগঠন একত্রিত করেন।

বিশিষ্ট্য স্বাধীনতা সংগ্রামী ও জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাস প্রনেতা ডঃ পট্রভি সীতা রামাইয়ার মতে, অবসর প্রাপ্ত ব্রিটিশ সিভিলিয়ান অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম বড়লাট লর্ড ডাফরিনের আনুকূল্যে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন। অপর পক্ষে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপধ্যায়ের মতে, জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভবে বড়লাট লর্ড ডাফরিনের মূখ্য ভূমিকা ছিল। কারণ প্রথমে হিউম সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা বলেন, কিন্তু ডাফরিন একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের উপর গুরুত্ব দেন এবং হিউম ডাফরিনের প্রস্তাব অনুসারে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।

কংগ্রেসের প্রথম যুগের নেতাদের মধ্যে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে দাদাভাই নওরোজি, ফিরোজ শাহ মেহতা, রমেশচন্দ্র দত্ত, বদরুদ্দীন তৈয়বাজি প্রভৃতির বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য।

সম্রাট বাবর ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার কৃতিত্ব

Indian National Congress প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যঃ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার  উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং এদেশে যাতে ইংরেজ শাসন দীর্ঘায়িত হয় তার পথ সুগম করা। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে ব্রিটিশ স্বার্থও রক্ষা হবে এদেশের মানুষও নিয়ন্ত্রিত হবে।

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ৪ টি মূল উদ্দেশ্যঃ

১। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত এলাকা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ভারতীয় দের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন।

২। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সমস্ত বর্ণ বৈষম্য দূর করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা।

৩। জ্ঞানী গুণী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে শলা-পরামর্শ করে ভারতীয় জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা চিহ্নিত ও তা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো ।

৪।আগামী ১ বছরের জন্য রাজনৈতিকবিদগণ কী করবেন সে জন্য নীতি নির্ধারণ ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ।

কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যঃ

১। শিক্ষিত শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা।
২। হিউম জনমত গঠনের জন্য কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতবাসীর অসন্তোষ দূর করে বৃটিশ সরকারকে রক্ষা করা।
কংগ্রেসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এটি ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।

গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ ১৮৮৫ খীঃ কংগ্রেসের  প্রতিষ্ঠালগ্নে কোনো উত্তেজনা আড়ম্বর ছিল না সত্য,কিন্তু কংগ্রেসের প্রথম ২০ বছরের ইতিহাস ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পর্বের সূচনা করে। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতীয় জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। দেশের রাজনৈতিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। জাতীয় কংগ্রেসে উদারনৈতিক নরমপন্থী নেতারা ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময়কার ভারতীয় নেতারা সকলেই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও পাশ্চাত্য মনোভাবাপন্ন। দাদাভাই নওরোজি ও রমেশচন্দ্র দত্ত বই রচনা করেন। ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলন কংগ্রেস জাতিকে নেতৃত্ব দে

ইতিহাসের জনক কে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা, ঐতি কাল 3 টি

য়। পলাশী পরবর্তী মানুষের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ নেয় কংগ্রেস।

ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়াঃ কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতিতে ব্রিটিশ সরকার ক্রমশ উদিগ্ন উঠে যদিও প্রথমে ব্রিটিশ শাসকদের মনোভাব জাতীয় কংগ্রেসের অনুকূলে ছিল। কিন্তু প্রথম তিনটি অধিবেশনে যে সকল প্রস্তাব গৃহিত হয় এবং সংস্কারের দাবিতে যেসব বক্তব্য পেশ করা হয় তাতে ব্রিটিশ কতৃপক্ষ অসন্তুষ্ট হয়,  এই ঐসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ব্রিটিশ সরকারের কংগ্রেস বিরোধী মনোভাবের পিছনে ব্রিটেনের তাৎকালিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছিল।

মূল্যায়নঃ জাতীয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক ও কর্মসূচী সংক্রান্ত দুইটি দুর্বলতা সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, প্রথমত জাতীয় কংগ্রেসে এইসময়ে পাকাপোক্ত সাংগঠনির কাঠামো গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সুনিদিষ্ট কোনো তহবল ছিল না- প্রতিটি অধিবেশনের ব্যয়ভার পরিচালনার জন্য আঞ্চলিক ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করা হত। হিউম কংগ্রেসের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ডঃ অনিল শীল মনে করেন সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার জন্য কংগ্রেস কোন সক্রিয় ব্রিটিশ-বিরোধী নীতি গ্রহণে উৎসাহ পায়নি।

Leave a Comment

Exit mobile version