আধুনিক রাশিয়ার স্রষ্টা মহান পিটার এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও তার অবদান

রাশিয়া পৃথিবীর মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে অন্যতম বিশাল রাজ্য। রাশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতিগত দিক থেকে স্লাভ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। যাদের আপ্রাণ চেষ্টায় রাশিয়াতে আধুনিকীকরণের ছোঁয়া লেগেছিল তাদের মধ্যে মহামতি পিটার অন্যতম। পিটার যখন রুশ (রাশিয়ান) সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে রাশিয়া পশ্চাৎপদ ছিল। রাশিয়ার জার আলেক্সিস এর পুত্র পিটার এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাশিয়ায় পূর্ববর্তী দূরবস্থার অবসান ঘটে। তার আমলেই রাশিয়া মধ্যযুগীয় ভাব কাটিয়ে আধুনিক যুগের ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে।মহান পিটার এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার

Peter the Great, The Czar of Russia, মহামতি পিটার: 

পিটার দ্য গ্রেট বা মহামতি পিটার 1672 সালের 30 মে ক্রেমলিন এ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জার আলেক্সিস এবং মা নাটালিয়া। নাটালিয়া ছিলেন জার আলেক্সিস এর দ্বিতীয় স্ত্রী। 10 বছর বয়সে তিনি তাঁর সৎ ভাই ইভান এর সাথে যৌথভাবে সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসার সময় তার অভিভাবক ছিল বড় সৎ বোন সোফিয়া । 1696 সালে ইভান মারা গেলে তিনি এককভাবে জার হন।

দ্রুঝিন্নিকঃ প্রাচীন স্লাভরা সামরিক অভিযানের সময় প্রত্যেকটি উপজাতির একজন নেতা নির্বাচন করতেন। তাকে প্রিন্স বলা হত। প্রিন্সের পার্শ্বচর দলের সামরিক সদস্যদের বলা হত দ্রুঝিন্নিক।
নবম শতকে স্লাভে বাণিজ্যের বিকাশ হয়।
নবম শতকে রুশ নামধারী কিয়েভের প্রিন্সরা শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তোলে।
বোইয়ারিনঃ কিয়েভ রুশ রাজ্যের ধনী ভূস্বামীদের বোইয়ারিন বলা হত।
এগারো শতকে কিয়েভ ইউরোপের সবচেয়ে বড় শহরের অন্যতম ছিল।
নবম শতকে কিয়েভ রুশ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে।
এগারো শতকে কিয়েভে গির্জা ছিল 400 টা।
13 শতকে মস্কো শহর গড়ে ওঠে।
Ivan the Great (3rd Ivan) (1462-1505):  মোঙ্গলদের শাসন থেকে রুশদেরকে মুক্ত করেছিলেন। রাশিয়া দুইশত বছরের মোঙ্গল আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়। তিনি প্রথম ‘রাশিয়ানদের জার’ (cZar of all the Russians) উপাধি ধারণ করেছিলেন।
Basil III (1505-1533): তৃতীয় ইভানের পুত্র।
Ivan IV (1533-1584): তৃতীয় ব্যাসিলের পুত্র। তার নিষ্ঠুরতার জন্য তাকে Ivan The Terrible বলা হয়।
চতুর্থ ইভানের মৃত্যুর পর রাশিয়ার অরাজকতার যুগ শুরু হয়। সিংহাসনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত গোলযোগের সুযোগে কোসাক জাতি রাশিয়ার অভ্যন্তরে লুটতরাজ শুরু করে। এই অরাজকতার সময় পোল্যান্ড রাশিয়া আক্রমণ করে তা দখল করে। এতে রাশিয়ার মানুষরা খুবই অপমানবোধ করে। তারা সমবেতভাবে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রাশিয়ার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনে।
Michael Romanoff (1613-1645):  রাশিয়া পোলদের কাছ স্বাধীনতা লাভের পর রাশিয়ার প্রতিনিধি সভা কর্তৃক রোমানফকে রাশিয়ার জারপদে নিয়োগ করে। রোমানফ রাজবংশের মাধ্যমে আধুনিক রাশিয়ার যাত্রা শুরু হয়।
Alexis (1645-1676): রোমানফের পুত্র। তিনি White Russia, Little Russia এর অধিকাংশ এবং কিয়েভ দখল করে সমগ্র রাশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
2nd Theodore (1676-1682): আলেক্সিসের পুত্র। অকর্মণ্য শাসক ছিলেন।
Peter the Great (1682-1725): আধুনিক রাশিয়ার জন্মদাতা। তার বাবার নাম জার আলেক্সিস এবং মায়ের নাম নাটালিয়া।
রাশিয়ার আধুনিকীকরণে পিটার এর অবদান:

পিটারের ক্ষমতা গ্রহন কালে রাশিয়া সামাজিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় ইত্যাদি সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে পশ্চাদপদ ছিল। ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে কোন দিক দিয়ে রাশিয়া উপযুক্ত ছিল না। এই অবস্থা হতে রাশিয়াকে উন্নয়নের জন্য পিটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু যে পরিবেশে পিটার ক্ষমতা গ্রহণ করেন সে পরিবেশে পিটারের দায়িত্ব ও কর্তব্য অল্প নয়। সাত শত বছর ধরে চলে আসা পশ্চাৎপদতা নিরসনে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

পিটার এর ইউরোপ ভ্রমণ: 

পিটার মিখাইলভ নাম ধারণ করে ইউরোপ ভ্রমণ করে পশ্চিমাদের উপর প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন। রাশিয়া ইউরোপীয় সভ্যতার প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় সব দিক দিয়েই পিছিয়ে ছিল। তিনি একে একে হল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস), ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ব্রান্ডেনবার্গ (প্রাশিয়ার অঙ্গরাজ্য; প্রাশিয়ার বর্তমান নাম জার্মানি) ভ্রমণ করে সমর বিজ্ঞান, অর্থনীতি, স্থাপত্য, প্রকৌশল, জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি রাশিয়াকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রাশিয়ার আধুনিকীকরণে অভ্যন্তরীণ নীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি ব্যাপক সংস্কার আনয়ন করেন।

পিটারের অভ্যন্তরীণ সংস্কার: 

পিটার রাশিয়ার রাজ শক্তিকে শক্তিশালী করতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী গঠন করেন। তিনি প্রেযোব্রাঝেনস্কোতে গার্ডবাহিনী গঠন করেছিলেন। পিটার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

সামরিক বাহিনী গঠন:

পিটার রাশিয়ার রাজশক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য সামরিক শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এজন্য তিনি প্রথমেই সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠন করেন। নিয়মিত স্থায়ী বেতনভোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে রাশিয়াতে মিলিশিয়া নামে একটি সেনাবাহিনী ছিল। পিটার কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিবারকে একজন করে সৈন্য সরবরাহ করতে নির্দেশ দিতেন। পিটারের রাজত্বের শেষে নিয়মিত সেনাবাহিনীর যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত সৈন্যসংখ্যা ছিল ২ লক্ষ। এদের সাথে যুক্ত হত ১ লক্ষ কসাক এবং কালমিক এবং অন্যান্য পূর্বাঞ্চলের জনগোষ্ঠীত থেকে অনির্দিষ্ট সংখ্যক স্থায়ী সৈন্য।

নৌবাহিনী গঠন:

পিটারের ইউরোপ ভ্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের সামরিক সংগঠন এবং নৌচলাচল, জাহাজ নির্মাণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। ইউরোপের দেশগুলোর সৈন্যের সম্মুখীন হওয়ার মতো উপযুক্ত শক্তি সঞ্চয় করার জন্য পিটার একটি স্থায়ী বেতনভোগী নৌ বাহিনী গঠন করেন। মহামতি পিটার রুশ নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নৌবাহিনীর জন্য প্রথম জাহাজ নির্মাণ করা হয় 1696 সালে। তার রাজত্বের শেষ দিকে রাশিয়ার বাল্টিক নৌবহরে বিভিন্ন ধরনের ৮০০ টি নৌবাহিনীর জাহাজ ছিল। নৌবাহিনীতে নাবিক এর সংখ্যা ছিল 28000। এই নৌ বাহিনী সুইডেন এবং তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।মহান পিটার এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার

শাসনতান্ত্রিক সংস্কার:

রাজ ক্ষমতাকে সর্বাত্মক করার জন্য মহামতি পিঠার শাসনতন্ত্রের কিছু সংস্কার সাধন করেন। তিনি ডুমা নামক অভিজাত সভা এবং জেমসকি সবোর নামক সাধারণ সভা বাতিল করেন। এগুলো পরিবর্তে তিনি নিজ মনোনীত 9 জন সদস্য নিয়ে সিনেট নামক এক রাজকীয় সভা গঠন করেন। শাসনকার্য কে তিনি 10 টি ভিন্ন ভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি ভাগই সিনেটের অধীনে স্থাপন করেন। সমগ্র সাম্রাজ্যকে 72 টি বিভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেকটিতে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করা হয়। এবং একটি করে ক্ষুদ্র সহায়ক সভা স্থাপন করেন। শহর এলাকায় একটি করে পৌরসভা স্থাপন করা হয়। এসকল সভা সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত একজন উচ্চপদস্থ ম্যাজিস্ট্রেট এর তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা হয়। প্রত্যেকটি গ্রামকে গ্রাম্য মির এর অধীনে আনা হয়। এভাবে গ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় শাসন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরই জার এর কর্তৃত্বে এনে সঙ্গবদ্ধ হয়।

ধর্মীয় সংস্কার:

পিটার রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের প্রধান পেট্রিয়ার্কের ক্ষমতা হ্রাস করেন। তার স্থলে পবিত্র ধর্ম সভা নামে একটি সভার উপর চার্চের পরিচালনার ভার ন্যস্ত করেন। এসভার সদস্যগণ প্রায়ই সামরিক না তাদের মধ্য থেকে নেওয়া হতো এবং ধর্মের সাথে এদের কোন সম্পর্ক থাকত না। তিনি গির্জার সম্পত্তি ও আয় বাজেয়াপ্ত করেন। তার এ ধর্মনীতি রুশ চার্চকে একটি সরকারি দপ্তরে পরিণত করে।

কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক সংস্কার:

পিটার কেন্দ্রীয় প্রশাসনে কলেজিয়াল সিস্টেম প্রবর্তন করে ৯ টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের বিষয়সমূহকে ৯ টি বিভাগে ভাগ করে প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্ব দেন একটি কলেজ এর উপর।১১ সদস্যের একটি বোর্ড দ্বারা প্রত্যেক বিভাগ শাসিত হতো। কলেজগুলো ছিল- ১) বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ; ২) রাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ; ৩) বিচার বিভাগ; ৪) রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিভাগ; ৫) সেনাবাহিনী বিভাগ; ৬) নৌ বাহিনী বিভাগ; ৭) ব্যবসা বানিজ্য বিভাগ; ৮) নিষ্কাশনক্ষম শিল্প ও উৎপাদন বিভাগ; ৯) রাষ্ট্রীয় ব্যয় বিভাগ। ১১ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ডে থাকত- ১ জন প্রেসিডেন্ট, ১ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১ জন বৈদেশিক উপদেষ্টা প্রভৃতি।
1707 সালে পিটার রাশিয়াকে ৮ টি প্রদেশে ভাগ করেন। প্রদেশগুলো হলো- ইন্সারল্যান্ড (সেন্টপিটার্সবুর্গ), মস্কো, কিয়েভ, স্পোলেনক্স, আর্চত্র্যাঞ্জেল, কাজান, আজফ এবং সাইবেরিয়া। 1711 সালে প্রদেশের সংখ্যা ৯টি করা হয়। 1719 সালে প্রদেশের সংখ্যা ১২ টি করা হয়।মহান পিটার এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার

পৌর প্রশাসন সংস্কার: 

পিটার 1724 সালে রাজকীয় ফরমান দ্বারা পৌর নাগরিকদেরকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো:-
১) প্রথম গিল্ড: ধনী বণিক, চিকিৎসক, ঔষধ প্রস্তুতকারক, স্বর্ণকার, বাণিজ্য জাহাজের ক্যাপ্টেন, চিত্রকর। ২) দ্বিতীয় গিল্ড: ক্ষুদ্র বণিক, ব্যবসায়ী, কারিগর। ৩) সাধারণ জনগণ: শহরের অন্যান্য অধিবাসী, ভাড়াটে শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক।
নগর প্রশাসন ছিল সিটি কাউন্সিলের হাতে। প্রেসিডেন্ট ও কয়েকজন সদস্য নিয়ে সিটি কাউন্সিল গঠিত হতো। সিটি কাউন্সিলের কর্মকর্তারা প্রথম ও দ্বিতীয় গিল্ড দ্বারা নির্বাচিত হতেন। শুধুমাত্র প্রথম গিল্ডের সদস্যরা সিটি কাউন্সিলের কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে পারতেন।

গির্জার সংস্কার: 

পিটারের সময় মঠসমূহ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং দুর্নীতির প্রধান কেন্দ্র। পিটার মঠ গুলোকে লাম্পট্য ও নাশকতামূলক কর্মের আখরা মনে করতেন। 1723 সালে এক ডিক্রিতে বলা হয়, নতুন ধর্মযাজক নিয়োগ করা যাবে না। মৃত্যুজনিত কারণে সৃষ্ট শূন্যপদ সাবেক সৈন্য দ্বারা পূরণ করা হবে। 1724 সালে এক ডিক্রি দ্বারা মঠের প্রধান উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়। মঠের প্রধান উদ্দেশ্য হলো -অসুস্থ, বৃদ্ধ, অভাবগ্রস্ত ও অনাথদেরকে সাহায্য করা।

শিক্ষা সংস্কার: 

পিটারের শাসনকাল এর শুরুতে মস্কো ও কিয়েভে একটি করে ধর্মীয় একাডেমি ছিল। মর্স কোদে একটি সাধারন একাডেমি ছিল। তিনি রাশিয়াতে নৌ ও কামান বিষয়ক বিদ্যা, অর্থনীতি, ভাষা, প্রকৌশল জ্ঞান শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি মস্কো ও পিটার্সবুর্গে কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি তিনি সাম্রাজ্য ব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনা করেন। 1714 সালে প্রত্যেক প্রদেশকে দুইটি করে গণিত স্কুল প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। 1722 সালে 42 টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিটার রাশিয়ার বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য “অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস” প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এর সকল প্রফেসর, ফেলো ও তাদের ছাত্রদেরকে জার্মানি থেকে আনা হতো। পরবর্তীতে এটি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।

ক্যালেন্ডার ও বর্ণমালার সংস্কার: 

পিটার 1700 সালে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি গ্রহণ করে বর্ষপঞ্জি পুনর্গঠন করেন। তিনি প্রাচীন সিরিনিক বর্ণমালার অক্ষরের সংখ্যা হ্রাস করে অবশিষ্ট বর্ণগুলোকে ল্যাটিন মডেলের কাছাকাছি এনে বর্ণমালার পুনর্গঠন করেন। তিনি প্রথম রুশ সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। জরুরী ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রযুক্তিক গ্রন্থের অনুবাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি মস্কোর রেড স্কয়ারে প্রথম নাট্যানুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। তিনি বাধ্যতামূলকভাবে মহিলাদের অবরুদ্ধতার অবসান ঘটান। তিনি এসেমব্লিসের ব্যবস্থা করেন। এখানে অভিজাতরা সস্ত্রীক একে অপরের সাথে গল্প-স্বল্প, নাচ ও নাস্তা দ্বারা আপ্যায়ন করে অবাধে মেলামেশা করতো।

সামাজিক সংস্কার: 

পিটার রাশিয়ার সমাজকে পাশ্চাত্য সমাজের অনুকরণে আধুনিক করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তিনি সকল প্রকার মুদ্রার ওজন হ্রাস করেন এবং পরোক্ষ কর প্রবর্তন করেন। তিনি শ্মশ্রু, কফিন, মৌমাছি পালন, স্নানাগার, পোশাকের দ্রব্য, লবণ বিক্রি ও অরুশ (রাশিয়ার বহির্ভূত) উপজাতির বিয়ের উপর কর ধার্য করেন। এ ব্যবস্থা স্ফীত অর্থ যোগান দিতে ব্যর্থ হয় এবং প্রত্যক্ষ কর প্রদানকারী শ্রেণীর পরিবর্তন করায়।

উত্তরাধিকার আইন সংস্কার: 

রাশিয়াতে জমিদার মারা গেলে জমিদারি তার সব সন্তানদের ভাগ করে দেয়া হত। ফলে জমিদারী অলাভজনক ইউনিটে পরিণত হত।এতে জমিদারের সন্তানরা কর প্রদানের ক্ষমতা হারাত। ফলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হতো। ১৭১৮ সালে পিটার প্রণীত এন্টেল ল অনুযায়ী একজন জমিদারের জমিদারী তার একজন সন্তান পাবে। জমিদারী প্রাপ্ত সেই সন্তান জমিদার (পিতা) কর্তৃক নির্বাচিত হবে। পিটারের মতে জমিদারের অন্যান্য সন্তানরা জমির উপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে চাকরি নিতে বাধ্য হবে।মহান পিটার এর অভ্যন্তরীণ সংস্কার

অর্থনৈতিক উন্নতি: 

পিটার রাশিয়ার শিল্পায়নে উৎসাহ দিয়েছিলেন। পিটার সৈন্য ও নাবিকের জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন এবং বস্ত্র বয়নের ওপর জোর দেন। কাগজ উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করা হয়। পিটারের রাজত্বের শেষ দিকে রাশিয়ায় পশম শিল্প, লিলেন শিল্প, চামড়া শিল্প, বস্ত্র শিল্প ও অলংকার শিল্প, খনিজ ও ধাতু শিল্প উন্নতি লাভ করেছিল। ১৬৯৫-১৭২৫ সময় সালে ৫২ টি নতুন লৌহ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলো থেকে রাশিয়ার প্রয়োজনীয় ৪০ ভাগ লোহা আহরণ করা হতো। তখন রাশিয়া ইংল্যান্ডের লোহার প্রয়োজন মেটাত।

পিটার সম্পদ উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ী ও কোম্পানি গুলোকে মূলধন সরবরাহ করতো। কারখানায় শ্রমিক এর অভাব এর সমস্যা রাষ্ট্র সমাধান করত। পিটার নাগরিকদের দায়িত্ব পালনের জন্য তাদেরকে শ্রেণীভূক্ত করেন। তিনি প্রত্যেক পরিবারের একটি রেজিস্টার রাখতেন এবং শাস্তির ভয় দেখিয়ে সকলকে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করতেন।

Leave a Comment

Exit mobile version